ষাট বছর বয়সে নায়াগ্রা জলপ্রপাত পাড়ি দেয়া অ্যানি এডসন টেলর
নায়াগ্রা জলপ্রপাত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত। নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক এবং কানাডার ওন্টারিও প্রদেশের মধ্যবর্তী আন্তর্জাতিক সীমানার ওপর অবস্থিত।
অনুমান করা হয়, আজ থেকে প্রায় দশ হাজার নয়শ বছর আগে এই জলপ্রপাতকে প্রথম চিহ্নিত করা হয়েছিল। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের তিন ভাগের এক ভাগ আমেরিকায়, এর নাম ‘আমেরিকান ফলস’। বাকি দুই ভাগ কানাডায়। যার নাম ‘কানাডিয়ান ফলস।
জলপ্রপাতের দিকে তাকালে একদিকে যেমন ভয়ে আপনার বুক কেঁপে উঠে তেমনি এর মোহময় আকর্ষণকে আপনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। এই আকর্ষণই অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষকে টেনে আনে নায়াগ্রাকে ছুঁয়ে দেখার কিংবা তার উপর হেঁটে যাওয়ার এক অদম্য বাসনাকে।
১৮২৯ সালের অক্টোবরের দিকে ‘স্যামপেচ’ নামের এক দুঃসাহসী অভিযাত্রী ঝাঁপ দিয়েছিলেন নায়াগ্রায়। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ঝাঁপ দেয়ার পরও এই ভদ্রলোক কিন্তু বেঁচে গিয়েছিলেন।
অ্যানি এডসন টেলর আরেকজন নারী, যিনি ৬৩ বছর বয়সে এই জলপ্রবাত পাড়ি দেন। তবে পাড়ি দেওয়ার আগে দাবি করেছিলেন তার বয়স ৪০। কিন্তু পরে নথিপত্র দেখে জানা গেলো ৬৩।
তার পাড়ি দেওয়ার সিস্টেমটা ছিল ভিন্ন রকমের, যা তাকে ঠাই করে নিয়েছে ইতিহাসে। সাহসী নারী হিসেবে তিনি পরিচিত।
এই সাহসী নারীর জন্মটা ২৪ অক্টোবর ১৯৩৮ সালে নিউ ইয়র্কের অবার্নে। বাবা মেরিক এডিসন আর মা লুক্রেতি উরিং, পরিবারে তার আট ভাই বোন ছিল। পেশায় বাবা ছিলেন একজন ময়দা মিলের মালিক। ১২ বছর বয়সে বাবাকে হারান অ্যানি । অ্যানির বাবা পরিবারের জন্য রেখে যান বিশাল সম্পদ। এতো বড় পরিবারের অ্যানির জন্য সম্পদ যথেষ্ট ছিল না।
ডেভিট টেলর নামে একজনকে বিয়ে করেছিলেন ১৭ বছর বয়সে। বিয়ের সাত বছর পর গৃহযুদ্ধে স্বামীকে হারান অ্যানি। কর্মের সন্ধানে শহর ত্যাগ করেন। পেশা হিসেবে নেন স্কুল শিক্ষকতাকে। তাদের একটি সন্তানও হয়েছিল, বিধবা হয়ে একাকী হয়ে যান অ্যানি । পরে জীবনে আর দ্বিতীয় বিয়ে করেননি।
সাহসী কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন ১৯০১ সালের ২৫ অক্টোবর। তিনি প্রথম এবং একমাত্র মানব, যিনি এই ভয়ঙ্কর জলপ্রবাতের ঝড়ের মধ্যে পড়েও বেঁচে ছিলেন। সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে সাহসী কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। অ্যানির আগে এই সাহসিকতার পরিচয় দিতে গিয়ে দশজনের প্রাণ গিয়েছিল। অ্যানির বানানো ব্যারলটির তৈরি কড়া হয়েছিল ভিতরে তুলা ও চামড়ার আস্তরে ঢাকা কাঠ দিয়ে। ব্যারল হচ্ছে কাঠের তৈরি একধরনের গোলাকার ড্রাম বিশেষ।
অ্যানি নিজেকে প্রস্তুতের আগে পোষা বিড়াল দিয়ে তিনি পরীক্ষা করে সফল হন। ২৫ তারিখের বিকাল চার’ টায় নৌকা যোগে যাত্রা শুরু করেন। নির্দিষ্ট স্থানের যাওয়ার আগে একজন সহযোগী নিয়ে যান। ঠিকমতো তাকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। পাঁচ ফুট লম্বা এবং তিন ফুট প্রশস্তের ব্যরলে এক ইঞ্চি পরিমাপের ছিদ্র ছিল যাতে নিশ্বাস নেওয়া যায়। একটি চিকন পাইপ দিয়ে শ্বাসের কাজ করেন অ্যানি।
মাথায় সামান্য ক্ষত ছাড়া বড় কোনো দুর্ঘটনা হয়নি অ্যানির অভিযানে। ৮৩ বছর বয়সে এই নারী অভিযাত্রী ১৯২১ সালে মারা যান। ববি লিচ নামে একজন ইস্পাতের ব্যারল দিয়ে এই জলপ্রবাত পাড়ি দিয়েছিলো যা তাকে মুগ্ধ করে ও প্রেরণা যোগায়। তবে আর্থিক কষ্ট তার সঙ্গী ছিল মৃত্যুর আগদিন পর্যন্ত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন