স্টিলের পাতে গড়া চাবিতে জীবন

 

স্টিলের পাতের ওপর রেতের ঘসায় তৈরি করেন ডুপ্লিকেট চাবি এভাবেই কেটে গেছে হান্নান মিয়ার এগারো বছর নানান অভিজ্ঞতা এ পেশায় বিকেল হলে বসেন দোকানে, রাজধানীর হজ্ব ক্যাম্পের অপর পাশের ফুটপাতের শেষ প্রান্তে দোকান হান্নান চাবিঘর, দোকান তো নয় পলিথিনের ছাউনি বিকেলেই কর্মঘণ্টা শুরু হান্নান মিয়ার চলে ঠিক রাত দশটা পর্যন্ত বিকেলে কেনো বসেন? সকালে বসেন না কেনো এমন প্রশ্নে হান্নান মিয়া বলেন, সকালে কাস্টমার থাকে না বিকেলেই চাপ থাকে বেশি  

কাজের শুরুতা জানতে চাইলে হান্নান মিয়া জানান, মাত্র ৮৯০ টাকা নিয়ে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় এসেছিলেন প্রথমে উঠেছিলেন গুলিস্তানে একটি মেসে মেসের একজনের তালা চাবি মেরামতের দোকান ছিল গুলিস্তানে, সেখান থেকে শেখা এই কাজ দুইমাস পর নিজেই দোকান দেন গুলিস্তানে ২০১৬ সালে আসেন এয়ারপোর্ট এলাকায়



কী কী কাজ করেন? এমন প্রশ্নে হান্নান মিয়া ব্যস্ততার মধ্যে থেকে বলেন, তালা চাবির সব কাজ করি তালার নতুন চাবি বানানো থেকে শুরু করে দেশি বিদেশি তালা মেরামতসহ হারিয়ে যাওয়া চাবির ডুপ্লিকেট  বানিয়ে থাকি কেমন ইনকাম হয় দৈনিক? এমন প্রশ্নে একটু বিব্রত হন হান্নান মিয়া আবার জানতে চাইলে বলেন, ছয়’শ থেকে সাত’শ টাকা হয় গড়ে টাকাটা বেশি আসে বাসায় গিয়ে কাজ করলে বাসায় গিয়ে কী কাজ করেন? ধরেন কেউ স্টিলের আলমারির চাবি হারিয়ে ফেললো বা ঘরের  চাবি হারিয়ে ফেলেলে তখন আয়টা ভালো হয় কেউ তি’শ নিচে দেয় না

ফুটপাতে দোকানদারি করেন কোনো সমস্যা হয়? তেমন না সপ্তাহে দু’ একদিন পুলিশ এসে উচ্ছেদ অভিযান চালায় তখন দোকান গুটিয়ে ঘণ্টা খানেক বন্ধ রাখতে হয় পরে পুলিশ চলে গেলে আবার বসি অন্য কোনো সমস্যা নেই

পরিবারে কে আছে? জানতে চাইলে হান্নান মিয়া জানান, স্ত্রীসহ তিন ছেলেকে নিয়ে সংসার বড় ছেলে ক্লাস সেভেনে পড়ে মেঝো ছেলে ফোরে আর সবার ছোট হাঁটতে পারে তারা থাকেন কই? জানতে চাইলে হান্নান মিয়া বলেন, সবাই গ্রামে থাকে ঢাকায় এনে থাকা খাওয়া সম্ভব না অনেক খরচ আমিই দু’মাসে একবার যাই চার পাঁচ দিন থাকি হান্নান মিয়া থাকেন কই জানতে চাইলে বলেন কাওলায় থাকি মেসে

কাজে দক্ষতা বেশ হান্নান মিয়ার দেখেই বুঝা যায়, চাবি দেখে চাবি বানাতে মাত্র চার মিনিট লাগে! আগেই তৈরি থাকে চাবির পাত, পাত কিনতে পাওয়া যায়। নরমাল তালার জন্য কেজি দর আর বিদেশি তালা হলে পিস হিসে। পুরান ঢাকা থেকে মালামাল আনতে হয়, চাবির সাথে পাত মিলিয়ে রেতের ঘসায় তৈরি হয় নতুন চাবি, তালা দেখতে হয় না  

চাইনিজ তালার ক্ষেত্রে লাগে মটরের মেশিন, পাশের হোটেল থেকে বিদ্যুতের লাইন টানা হয়েছে মাস শেষে দিতে হয় তিন’শ টাকা  একটি চাবি বানাতে মজুরি নেন কতো? সাধারণ বাংলা তালা হলে বিশ টাকা আর বিদেশী হলে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা

তালা মেরামতেও দক্ষ হান্নান মিয়া, দেশি তালা ঠিক করতে সময় লাগে বড়োজোর সাত থেকে আট মিনিট আর হ্যাসবল হলে সময়টা বেশি লাগে, হবে না বা পারবো না এমন কথা বলতে নারাজ, লজ্জা লাগে কাস্টমারকে ফিরিয়ে দিতে।

এয়ারপোর্টে অন্য কোনো দোকান আছে কি না জানতে চাইলে হান্নান মিয়া বলেন, আমিই হজ্ব ক্যাম্পের সামনে দোকানদার। পেশার পরিবর্তনের চিন্তা আছে কি না প্রশ্ন করলে হান্নান হাসিমুখে চশ্মার ফাঁকে উঁকি দিয়ে বলেন না, এমনিতে ভালো আছি। পরিশ্রমটা কম টাকা পয়সা যা কামাই তা নিয়ে ভালোই আছি।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ষাট বছর বয়সে নায়াগ্রা জলপ্রপাত পাড়ি দেয়া অ্যানি এডসন টেলর

কেমন ছিল ময়ূর সিংহাসন?

মহামারী প্লেগ, পলিও আর ভয়ানক পীত জ্বরের কথা