ইতিহাসের ধ্বংসাত্মক ৫ টি যুদ্ধ
ছবি: Garrison's heroic defence. Artist V. Pamfilov
অ্যাডলফ হিটলার বলতেন, যুদ্ধই জীবন, যুদ্ধই সর্বজনীন। ইতিহাসের এমন
কোন অধ্যায় নেই যেখানে রণ ক্ষেত্রের ডামাডোল বাঁজেনি। পৃথিবীর শুরু থেকেই মানুষ সমর
সংগ্রামে জড়িয়েছে। ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিস্বার্থের বলি হয়ে মরেছে বহু। সবচেয়ে
বেশি হতাহতের ঘটনায় দশটি যুদ্ধের বর্ণনা দেয়া হলো:-
১. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (World War II)
১৯৩৯ খ্রি. - ১৯৪৫ খ্রি.
ছবি : সংগৃহীত। US 2nd Infantry Division Guard
with German Prisoners (POW) near Schoneseiffen 1945 Germany
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে বিবেচনা করা হয় ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় হিসেবে। হলোকাস্ট, দুর্ভিক্ষ ও মহামারির কারণে আনুমানিক ৭ কোটি লোক এ যুদ্ধে প্রাণ হারায়। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত হয়। দুইটি বৃহৎ সামরিক জোট অক্ষশক্তি (জার্মানী, ইতালি, জাপান) ও মিত্রশক্তির (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন ও অন্যান্য) ১০ কোটি সামরিক সদস্য সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। অ্যাডলফ হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খল নায়ক হিসেবে বিবেচিত। আধুনিক সমরাস্ত্রের ব্যবহার ও পৃথিবীর বেশিরভাগই রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণ এত বেশি ক্ষয়ক্ষতির কারণ।
২. মঙ্গোল বিজয়াভিযান (Mongol conquests)
১২০৭
খ্রি. – ১৪৭২ খ্রি.
শিল্পীর কল্পনায় মঙ্গোল যুদ্ধ। ছবি : সংগৃহীত
ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস যুদ্ধগুলো পরিচালনা করেছে মঙ্গোলরা। প্রবল প্রতাপশালী
মঙ্গোল সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল পৃথিবীর মোট ভূখন্ডের ২২ ভাগ। ইউরোপ, এশিয়া, সাইবেরিয়া
ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ সহ ইতিহাসের সবচেয়ে বৃহৎ ও অবিচ্ছিন্ন ভূমির মালিক ছিলো
তারা। চেঙ্গিস খান ছিলেন সাম্রাজ্যের প্রধান কান্ডারি। মঙ্গোলরা ৬ কোটির ও বেশি মানুষকে
হত্যা করে। যা ছিলো পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা ১১ ভাগ।
৩. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (World War I)
১৯১৪ খ্রি. – ১৯১৮ খ্রি.
যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের দেহাবশেষ। ছবি: সংগৃহীত
আপা:ত দৃষ্টিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বা গ্রেট ওয়্যার শুরু হয় অষ্ট্রিয়ার যুবরাজ ফার্দিনান্দের (Archduke Franz Ferdinand) গুপ্তহত্যার মধ্য দিয়ে। তবে ঐতিহাসিকরা মনে করেন, প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ সংগঠিত হবার পিছনে এর চেয়ে বড় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ জড়িত। শক্তিশালী দেশগুলোর জন্য এটাই ছিলো প্রথম সম্মিলিত শো ডাউন বা শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ। চার বছর ব্যাপী এই যুদ্ধে, পৃথিবীর ৩ ভাগ মানুষের (৬ কোটি) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মৃত্যু ঘটে। অষ্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, জার্মানি, বুলগেরিয়ার বিপরীতে যুদ্ধে সামিল হয়েছিল সার্বিয়া, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি ও আমেরিকার মতো মিত্রশক্তিরা। এ যুদ্ধের ফল স্বরুপ পৃথিবীতে চারটি বৃহৎ সাম্রাজ্যের পতন ঘটে ও অনেক দেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
৪. লুসান বিদ্রোহ (An Lushan Rebellion)
৭৫৫ খ্রি. – ৭৬৩ খ্রি.
শিল্পীর চোখে কল্পিত লুসান বিদ্রোহ। ছবি: সংগৃহীত।
চীনের তাং ও ইয়ান রাজবংশের মধ্যে বিবাদে সে সময়কালের হিসেবে পৃথিবীর ১৪ ভাগ মানষের মৃত্যু হয়। যা সংখ্যার হিসেবে ৩ কোটি ষাট লক্ষ। ইতিহাসের নৃশংসতম এ যুদ্ধে বহু নিরপরাধ প্রজা প্রাণ হারায়। ধারণা করা হয় দক্ষিণ চীনে ইয়ান রাজবংশের কোন এক জেনারেলের নেতৃত্বে এই বিদ্রোহ সংগঠিত হয়েছিলো।
৫.
তাইপিং বিদ্রোহ (Taiping Rebellion)
১৮৫০ খ্রি. – ১৮৬৪ খ্রি.
শিল্পীর চোখে কল্পিত তাইপিং বিদ্রোহ। ছবি: সংগৃহীত।
তাইপিং বিদ্রোহ ছিলো উনিশ শতকের প্রথম গণ-অভ্যুত্থান। চীনের জিং সাম্রাজ্যের
অন্যায় অবিচার ও বহুকাল ধরে চলে আসা জুলুমের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। যা পরবর্তীকালে
রাজনৈতিক আন্দোলন ও গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়। আনুমানিক ৩ কোটি মানুষ মারা যায় এ বিদ্রোহের
ফলে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন