কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্যের নানা রুপ।

ছবি:
ইকোনমিস্ট পত্রিকা থেকে সংগৃহীত।
অফিসে ও কর্মজীবনে নারীরা প্রতিনিয়ত
অসমতার মুখোমুখি হচ্ছে। লন্ডনের বিখ্যাত সাপ্তাহিক সাময়িকী, দ্য ইকনোমিস্ট এর অক্টোবর সংখ্যায় এই বিষয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। লেখাটির
সারাংশ এখানে তুলে ধরা হলো,
ব্রিটিশ চাকুরিজীবী মেগান লন্ডনের একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে
কাজ করতেন। অর্থনীতি ও হিসাব বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রিধারী এই নারী ভালো ক্যারিয়ার গড়ার
জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু সবকিছু তার মতো করে হলো না। মেয়ের জন্ম
হবার পর, একই সাথে চাকরি ও মেয়েকে সামলানো তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। অফিস সিডিউল বদলানো
ও কিছু কাজে বস তাকে সাহায্য না করায় মেগানকে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। এর কিছু বছর পর স্বামীর
সাথে ও ডিভোর্স হয় মেগানের।
সিঙ্গেল মাদার হিসেবে একা দায়িত্ব পালন ও ছোট আয়ের চাকরি সঙ্গতিপূর্ণ
না হলেও তখন তার কিছুই করার ছিল না। এখানে ঘটে যাওয়া পুরো এ বিষয়টি ভাবা যায় মাতৃত্বের শাস্তি হিসেবে!
আমাদের কর্পোরেট অফিসগুলোতে যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে দেখা হয় কর্মঘন্টা,
কাজের মান ও নেতৃত্ব দেয়াকে। অপরদিকে গৃহস্থলির কাজ, সন্তানপালন ও সবাইকে দেখাশোনার
মত সময়ক্ষেপণ করা কাজগুলো নারীরা করে থাকে। এটাই নিয়ম হয়ে গেছে।
এক জরিপে দেখা যায়, ধনী ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে একজন পুরুষের পূর্ণঘন্টার
আয়ের শতকরা ৮৫ ভাগ বেতন পেয়ে থাকেন নারীরা। আমেরিকার শীর্ষ চারটি পেশা, যেমন: শিক্ষকতা,
সেবিকা, অফিস সহকারী ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা ক্ষেত্রের ৮০ ভাগই কর্মীই হচ্ছেন নারী।
(প্রবন্ধটিতে তথ্যসূত্র
দেয়া নেই)
এসব ভিন্ন ভিন্ন পেশায় বেতন প্রদানের ক্ষেত্রেও বৈষম্য দেখা যায়। একজন
নার্স পুলিশের চেয়ে কম বেতন পেয়ে থাকেন। এছাড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা (যেখানে
বেশির ভাগই নারী কর্মী) কম বেতন পেয়ে থাকেন নিরাপত্তাকর্মীদের চেয়ে।
আরো একটি মজার তথ্য হলো, আমেরিকায় ব্যবসায় সনদ ও পদক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে
নারী ও পুরুষ সংখ্যা প্রায় সমান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পদে নিয়োগ পাওয়া মাত্র
পাঁচ ভাগের এক ভাগ নারী। এভাবে বৈষম্য চলছেই।
পড়ালেখার ক্ষেত্রে, কাগজে-কলমে নারী পুরুষের স্বাধীনতা রয়েছে। চাকরির ক্ষেত্রেও
বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনেক আগে। তবু এখনও এটা স্পষ্ট, নারী ও পুরুষের পৃথকীকরণ
এখনও সব জায়গায় বজায় রয়েছে।
কানাডায় এক গবেষণায় দেখা যায়, চাকরির বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন পুরুষবাচক
শব্দের ব্যবহার (যেমন নেতা, প্রতিযোগী ইত্যাদি) নারীদের ওই চাকুরি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের
ক্ষেত্রে অনাগ্রহী করে তুলে। ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত ও বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়গুলোতে মেয়েদের
পড়ার আগ্রহ বাড়াতে যেভাবে প্রচারণা চালানো হয়। তেমনি মেয়েলী (!) বিষয়ক পেশাতে (নার্সিং,
কলসেন্টার, রিসিপসনিস্ট, এয়ার হোস্টস ইত্যাদি) পুরুষের আগ্রহ বাড়াতে কোন পদক্ষেপ নেয়া
হয় না।
বিভিন্ন দেশে এখনো এই ধারণা প্রচলিত আছে যে, একজন চাকুরিজীবী মা সঠিকভাবে
তার সন্তানদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। এই অভিযোগটুকু নারীদের শুনতে হয়। পক্ষান্তরে
চাকরির ব্যাপারেও একই অভিযোগ তাদের শুনতে হয়। অনেক নারী ফুল টাইম জবের পরিবর্তে, পার্ট
টাইম জব বেছে নিলেও সেটা তাদের ক্যারিয়ার হত্যার সমতুল্য হয়ে দাঁড়ায়। চাকুরী জীবনে
তারা পযাপ্ত অর্থের মালিক না হতে পারলে শেষ বয়সে অথবা ডিভোর্সের পর সেসব নারীরা ভুক্তেভোগী
হয়ে থাকেন। তাই মেয়েদের ক্যারিয়ার গঠনে পিছিয়ে পড়ার জন্য পারিবারিক দায়বদ্ধতা বড় একটি
কারণ। নারীর প্রতি এসব বৈষম্যে রোধে পুরুষদের দায়িত্ব কতটুকু সেটা এখনো প্রশ্নবোধক
চিহ্ন হয়ে আছে!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন