১৯ শতকের ঢাকার সেহরি ও ইফতার

 

সময়টা ১৯ শতকের ও বিশ শতকের শুরুর ঢাকার প্রতিচ্ছবি। শবে বরাতের পরেই রমজানে আগমন বার্তা  ঢাকার ঘরে ঘরে ও মহল্লায় ব্যস্ততা ও সব ধরণের প্রস্তুতির আভ পরিলক্ষিত হতো। মসজিদে মসজিদে চুঙ্কাম ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সাথে অবস্থাপন্নদের বাড়িতে রাজমিস্ত্রি ও মুজুরদের আগমন রমজানের পূর্বাভাস ছিল।


গ্রামের গরিব ও গৃহস্থ পরিবারেরা ঘরের মেঝে পরিষ্কার মাটি দিয়ে লেপন করতো। ঝক ঝক তক তক করে তুলতো পীড়া। পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ঘরা মাটির নতুন হুক্কা, নৈচা ইত্যাদি এনে সুরভিত করে নেওয়া হতো। তামাকের বিশেষ বন্দোবস্ত করা হতো। তোকমা , ইসুপগুল, খেজুরের গুড়, থাল মিসরি, গোলাপ কেওড়া সাধ্যের মধ্যে যতোটুকু সম্ভব এনে রাখা হতো।

চাঁদ রাতে বাজারগুলিতে মানুষের ভিড় লেগে যেতো। চাঁদ রাতেই প্রত্যেক ঘরে বিছানা পত্রের ব্যবস্থা হয়ে যেতো। অতঃপর চাঁদ দেখার প্রস্তুতি। ঢাকার উঁচু ইমারতে ছাদের উপর লোকজন সময়ের অনেক আগে পৌঁছে যেতো। উৎসাহীরা নৌকায় নদীর মাঝখানে নিয়ে চাঁদ দেখতো। প্রথম দেখার প্রতিযোগিতায় , হৈ হুল্লোড় , খুশি বালক- যুবক ক্ষেত্র বিশেষে বৃদ্ধরা তাদের দৃষ্টি শক্তি পরীক্ষার জন্য জমায়েত হতো। চাঁদ দেখার পর হৈ চৈ এবং একে অপরের সাথে ঈদের মোবারকবাদ জানাতো। ছোটরা বড়দের কাছে সালাম করে দোয়া নিয়ে ফিরে যেতো।  

রমজানে তারাবীর সালাতের জন্য আগেই হাফেজ ঠিক করে রাখা হতো। গ্রামে সূরা তারাবীর প্রচলন ছিল। বাজারের মসজিদে আগেই নামাজের জামায়াত শুরু হয়ে যেতো কিন্তু গ্রামের মসজিদে একটু দেরিতে শুরু হতো

সেহরির ঘুম থেকে জাগাবার জন্য কিছু লোকের উপর দায়িত্ব বণ্টন করা থাকতো। যারা লণ্ঠন ও লাঠি নিয়ে দরজায় দরজায় চিৎকার করতো। রমজানের প্রথম দিকে সাধ্যমতো শহর ও গ্রামের মানুষেরা ভালো খাবার খেতো। ঢাকার মোঘল ও কাশ্মীরিদের বাড়িতে সেহরির পর চা খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। হুক্কা, পান, গ্রহণের অভ্যস্তরা করা ধরণের তামাক পান করতো। পহেজগার লোকেরা ফজর পর্যন্ত কোরআন পাঠ করতো।   

জোহরের পর মহিলারা রান্নার কাজ শুরু করতো। ইফতারের আইটেমে ছিল ভিন্ন পদের খাবার। শিক কাবাব, কাছ কাবাব, মুরগীর শিক কাবাব, মুরগীর হাণ্ডি কাবাব প্রায় বাড়িতে বানানো হতো। গ্রামে রুটি, সুজির হালুয়া, খেসারী ডালের পিঁয়াজু সহ মুড়ি, চিড়া, দই, পায়েস ইত্যাদি ছিল। মুড়ির ভর্তার প্রচলন বেশি ছিল।

পানি ঠাণ্ডার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা হতো। অবস্থাপন্ন পরিবারে শোরা (যবখার) এর সাহায্যে পানি ঠাণ্ডা করা হতো, ঐ সময়ে প্রায় বাড়িতে কুয়া ছিল।

 

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ষাট বছর বয়সে নায়াগ্রা জলপ্রপাত পাড়ি দেয়া অ্যানি এডসন টেলর

কেমন ছিল ময়ূর সিংহাসন?

মহামারী প্লেগ, পলিও আর ভয়ানক পীত জ্বরের কথা