বাংলাদেশের ‘আইসম্যান’ তারা!
প্রকৃতিতে এখন শীতের আমেজ। শহরে শীত না পড়লেও গ্রামে শীতের মাত্রা মোটামুটি। সামান্য শীতেই গোসলের সময় গরম পানি ব্যবহার শুরু করেন অনেকে। কিন্তু এমনও কিছু মানুষ আছে যাদের সারা দিন কাটে বরফ ঘেঁটে। খালি হাতে বরফ ঘাঁটলেও ঠান্ডা লাগে না তাদের!
এমনই একজন ৪৮ বছর বয়সী উসমান মিয়া। রাজধানীর
এয়ারপোর্ট
এলাকায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্ননেসা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের থেকে মিনিট পাঁচেক সামনে হাঁটলেই একটি বরফ ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন তিনি। সন্ধ্যা গড়িয়ে
রাতের আগ, টিম টিম লাল ৬০ ওয়াটের কয়েকটি লাইট জ্বলছে। সাইনবোর্ড
নেই ফ্যাক্টরির। সবাই চিনে আবু মিয়ার বরফ কল নামেই। টিনের
ভাঙ্গা ঘর।
ভোর থেকে শুরু হয় কাজ চলে সন্ধ্যা
পর্যন্ত। দুপুরে অবসর পান খানিকটা সময়। সারা দিন পানি আর বরফ নিয়েই কাটে
তার। বরফের অনেক চাহিদা, অবসর নেই। শরবতের দোকান, মাছের আড়ত নানান কাজে লাগে বরফ। তবুও কোনো ঠান্ডা
জাতীয় অসুখ হয় না তার। বরফ টানার
সময় হাতে গ্লাভস না পড়ার কারণ হিসেবে বলেন, এটা পড়ে ভালো ভাবে কাজ করা যায় না।
ফ্যাক্টরির
মালিক আবু মিয়া এগিয়ে এলেন। জানতে
চাইলে বলেন, র্দীঘ ১৫
বছর থেকে এই বরফ মিলের সাথে জড়িত। কিন্তু কখনও বরফ নিয়ে কাজ করার জন্য ঠান্ডা লেগেছে তার মনে পড়ে
না।
এটা খুব সাধারণ একটা কাজ। কাজ না করলেই
বরং ভালো
লাগে না।
তবে আদ দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক চর্ম বিশেষজ্ঞ ডা. রুবাইয়া আলী জানালেন ভিন্ন কথা। ‘’বরফে অনেকক্ষণ কাজ করার কারণে ফসফাইড রোগ হয়। এটাকে বাংলায় বলে বরফে কামড়ানো বা বরফের জন্য হাতে বা পায়ে এক ধরণের ক্ষত সৃষ্টি হওয়া। এই রোগ থেকে পেটে আলসারেরও সৃষ্টি হতে পারে’’।
‘’এছাড়াও বেশি সময় বরফ ঘাঁটলে সেফসিস ও হাইপোথার্মিয়াতেও আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। এতে প্রাণহানিরও আশঙ্কা থাকে। তবে এই ধরণের রোগ সাধারণত ০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাজ করার সময় বেশি হয়। কিন্তু আমাদের দেশের বরফ ফ্যাক্টরিতে যারা কাজ করে
তাদের এই ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম’’।
অন্যদিকে আবু
মিয়া ১৫ বছর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও ছোটবেলা থেকেই এই পেশা দেখে আসছেন। বলা যায় উওরাধিকার সূত্রে এই পেশার সাথে জড়িত। তার বাবাও বরফমিলের মালিক ছিলেন।
তখন ব্যবসা ছিল। তখন বরফ ও আইসক্রীম ফ্যাক্টরি ছিল।
বরফ জমানো মটর ও কম্পোপ্রেসার চালাতে
প্রয়োজনীয়
বিদ্যুতের
দাম প্রায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ব্লুওয়ার নামে মেশিনটি চলে গ্যাস দিয়ে। সেই গ্যাসের দামও দিন দিন বেড়ে চলেছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বরফের দাম বাড়ানো যাচ্ছে না।
সব মিলিয়ে বরফ মিলের ব্যবসা এখন মন্দা। ব্যবসা বাঁচাতে হলে এখন বরফ মিলের মালিক সমিতি গঠন ছাড়া উপায় নেই। সমিতি হলে সবাই মিলে জোট করে বরফের
দাম বাড়ানো সম্ভব হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন