যে কথাগুলো কখনোই বলতে হয় না সহকর্মীদের
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের
গন্ডি পেরিয়ে আমরা কর্মক্ষেত্রে যোগদান করি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের যাদের সাথে
এতটা দিন পার করি তাদের বন্ধু-সহপাঠি বলি। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে যাদের সাথে দীর্ঘ ৮-৯ঘন্টা
পার করি তাদের বলি সহকর্মী। বন্ধু এবং সহকর্মী কথাগুলোর অর্থ যেমন ভিন্ন ঠিক একই ভাবে
এদের সাথে আচরণ, কথার ধরনও হবে ভিন্ন। অফিসে আপনি হয়তোবা নতুন বা পুরাতন। সে যাই হোক,
একজন সহকর্মীর সাথে যখন প্রথম পরিচয় হবেন তখন অবশ্যই মনে রাখবেন প্রথম অবস্থায় কারো
সাথে নেতিবাচক কোন আচরণ করবেন না। অনেককে প্রথম দেখায় ভালো নাও লাগতে পারে বা প্রথম
দেখে তার সম্পর্কে যা যা ভাবছেন তা নাও হতে পারে। তাই কোন সহকর্মীর সাথে প্রথম পরিচয়ে
এমন কিছু বলবেন নাহ যাতে আপনার কথার উপর নির্ভর করে আপনি কেমন, আপনার ব্যক্তিত্ব কেমন,
অফিস কেমন তা প্রকাশ পায়। নতুন দেখায় এমন কোন ধরণের নেতিবাচক কথা নয় যাতে বিভ্রান্ত
ছড়ায়। কোন কোন কথার উপর নির্ভর করে আপনার প্রতি সহকর্মীর
নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিতে পারে তা জানাটা আবশ্যক।
জেনে
নিন এবার সেই কথাগুলো:
®
আপনার বেতনটা ঠিক কত এই প্রশ্নটি নতুন
সহকর্মীকে জিজ্ঞেস করা মানে পুরোপুরি অশোভনীয় একটি আচরণের পরিচয় দেওয়া। কারণ বেতনের
বিষয়টি প্রত্যেকটি মানুষের কাছে একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই আলোচনা
করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তাছাড়া প্রথমবার আলোচনায় বেতনের কথা জিজ্ঞাসা করা উচিত
নয়।
®
অফিসে সবার মধ্যে কাউকে হয়তোবা আপনার
ভালো লাগতে নাও পারে। সেটা সম্পূর্ণই আপনার নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু প্রথম দেখায় কোন
সহকর্মীকে বলতে পারবেন নাহ ওনার সাথে বা ঐ ব্যক্তির সাথে মিশবেন নাহ। এতে সে আপনাকে
সংকীর্ণ মনের মানুষ মনে করবে। এমনও তো হতে পারে যাকে আপনার পছন্দ না কিন্তু তাকে তার
পছন্দও হতে পারে।
®
গুডলাক বা দুঃখিত এই কথাগুলো সহকর্মীদের
বলা ঠিক না। বারবার দুঃখিত বলার কারণে সে বিরক্তবোধ করতে পারে। আবার গুডলাক কথাটা যদি
সত্যি সত্যিই সৌভাগ্য কামনা করে থাকেন তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু তামাশা করে বলে কাউকে
মানসিকভাবে কষ্ট একে বারেই দেওয়া দিক না। অফিসে বসে রাজনৈতিক আলাপ না করাই ভালো কারণ
অফিসে রাজনৈতিক আলাপ খুবই বিপজ্জনক।
®
আপনাকে আজ খুব আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে। ডেটিংয়ে
যাচ্ছেন। এই ধরণের অপ্রসাঙ্গিক কথা বলে নিজেকে ছোট বা হেয় না করাই ভালো। এই ধরণের
প্রশ্ন করা মানেই নিজেকে অপরিপক্ব প্রকাশ করা। আবার সহকর্মীকে হঠাৎ করে সে গর্ভবতী
কিনা তা জানতে চাইবেন না। যদি সত্যিই সে গর্ভবতী না হয় তাহলে অবশ্যই তিনি অপমানিত বোধ
করবেন। আর গর্ভবতী হয়ে থাকলে মানসিকভাবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য প্রস্তুত নাও থাকতে
পারেন।
®
কোন সহকর্মীকে এই, ওহে, শুনছো, আপনি
এই রকম সম্বোন্ধসূচক শব্দ ব্যবহার না করে নাম ধরে ডাকতে হয়। নাম মনে রাখাও এক ধরণের
দক্ষতা। নতুন সহকর্মীদেরকে অনুমান নির্ভর নাম ধরে না ডেকে বরং তার নামটি ভালো করে মনে
রেখে তা ধরে ডাকাই ভালো।
®
নতুন সহকর্মীদের গায়ে হঠাৎ ধাক্কা লেগে
গেলে বা তাদের ওপর পানি, চা, কফি ফেলে দিলে সবিনয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। কিন্তু ‘দুঃখিত‘
শব্দটি সহজে ব্যবহার করবেন না। এতে তারা আপনার সম্পর্কে ভূল ধারণা পোষন করতে পারে।
®
সবচেয়ে রুঢ় আচরণ হল নতুন সহকর্মীকে
অগ্রাহ্য করা। আপনার চলার পথে যদি তার সামনে পড়ে তাহলে তার সঙ্গে নম্র আচরণ করে শুভেচ্ছা
বিনিময় করবেন। আর অফিসে কোন সহকর্মীর চেহা্রা নিয়ে ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক কোনো মন্তব্যই
বেশি করা উচিত নয়।
®
অনেক সময় নিজের সাথে টাকা নাও থাকতে
পারে। তার জন্য হঠাৎ কোন সহকর্মীর কাছে দুপুরের খাবারের জন্য টাকা ধার চাওয়া যেতে পারে।
কিন্তু যেটা যদি হয় নিয়মিত তাহলে তা একদমই শোভনীয় দেখায় না।
®
কর্মস্থলে প্রায়ই ধর্ম, পরিবার , সন্তান
লালন-পালনসহ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয়। কিন্তু তা যদি হয় কোন বিশেষ গোষ্ঠীর
প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য তাহলে তা অপেশাদারিত্বের এবং বোকামির লক্ষণ।
®
ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে অফিসে কখনোই আলোচনা
করা উচিত নয়। যদি কোন সহকর্মী নিজে থেকে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা না করেন তবে এই
বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম।
®
সব প্রতিষ্ঠানেই ভালো-মন্দ সহ বিভিন্ন
দিক রয়েছে। কারো সাথে প্রথমবারের দেখায় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক অনুভূতি প্রকাশ
না করাই ভালো। সব সময় মনে রাখতে হবে, অভিযোগ নতুন পরিচয় হওয়া কোনো ব্যক্তির কাছে নয়।
বরং করতে হবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে।
®
কর্মক্ষেত্রে সব থেকে বেশি এড়িয়ে চলতে
হবে পরচর্চা। নতুন বা পুরাতন কর্মী কারো সামনেই পরচর্চা করা যাবে না।
সহকর্মীদের
সাথে অবশ্যই সম্পর্ক হবে চমৎকার, ভালো এবং দারুন। কাজের জন্য এটা খুব দরকার। কিন্তু
সেই সম্পর্কের মধ্যে থাকবে ভদ্রতা, মার্জিত এবং শালীন আচরণ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন