মুদ্রাদোষ

 

অনেককেই দেখা যায় কারো সাথে পরিচয় হওয়ার সাথে সাথে তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন শুরু করে দেয়। যাকে ভদ্রতা না বলে অভদ্রতা বলাই শ্রেয়। প্রথম পরিচয়ে বা কেউ নিজ থেকে না বলতে চাইলে একান্ত কারো ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন করা উচিত যে নয় তা প্রশ্নকর্তা বেমালুম ভুলে গিয়ে প্রশ্ন করতে থাকেন। ঠিক একই ভাবে আমাদের অনেকগুলো খারাপ বা বিরক্তিকর বদঅভ্যাসের মধ্যে মুদ্রাদোষ অন্যতম।



মুদ্রাদোষ অনেক রকমের। এই যেমন- কেউ আছে কথা বলার সময় প্রয়োজন ছাড়াই হাত বেশি নাড়ে, শুধু শুধু হাতের নখ কামড়ায়, কেউ কেউ আছে কোনো কাজ করে দেওয়ার জন্য অন্যের গায়ে হাত দিয়ে অনুনয়-বিনয় করে। বসে থাকা অবস্থায় বারবার পা নাড়ে, যেখানে সেখানে নাকের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে চুলকানো, হাতের কাছে লম্বা কিছু পেলেই কানে ঢুকিয়ে খোঁচানো, আঙুল ফোটানো, জোরে জোরে হাত নেড়ে বা আঙুল তুলে কথা বলা। কেউ আছে সবার সামনে দাঁত খোঁচায়, মুখে হাতস চাপা না দিযে হাই তোলে, ঢেকুর তোলে, জোরে জোরে কাশে, হাঁচি দেন, কেউ বা যেখানে সেখানে থুথু-পানের পিক ইত্যাদি ফেলেন। অর্থাৎ যে কাজগুলো একজনের সামনে করলে আরও যারা আছে তারা বিরক্ত হন বা অপছন্দ করেন তাই মূলত মুদ্রাদোষ বা খারাপ অভ্যাস বলে আমরা ধরে নেয়। আর মানুষ নিজের মনের অজান্তেই এগুলো ত্যাগ না করে প্রতিনিয়ত চর্চা করতে থাকে।

একটু চেষ্টা আর একান্ত ইচ্ছাশক্তি থাকলেই আমরা এই থেকে মুক্তি পেতে পারি। তো এবার জেনে নেই এ থেকে মুক্তি পাবার কিছু উপায়।

১. প্রথমেই নিজের যে মুদ্রাদোষটি আছে তা শনাক্ত করার চেষ্টা করুন। আর সব সময় সচেতন থাকার চেষ্টা করুন এই ভেবে যে মনের ভুলেও এই ধরণের অভ্যাসের চর্চা না হয়।

২. আনমনে বারবার যিনি পা নাড়ছেন কোন ব্যাপারী না শুধু আপনার বসার ধরনটা বদলে ফেলুন আর যখননি দেখবেন পা নাড়ছেন দেখা মাত্রই থামিয়ে ফেলুন। এইভাবে কয়েক দিন চেষ্টা করুন দেখবেন এটা বন্ধ হয়ে গেছে।

৩. যিনি কথা বলতে বলতে হাত নাড়েন, তিনি কথা বলার সময় হাত পেছনের দিকে রাখুন। এবং মনে মনে ভাবুন আপনি হাত না নেড়েও কথো বলতে পারেন। সব সময় নিজেই নিজের ওপর বিশ্বাস ও নিয়ন্ত্রণ রাখুন।

৪. যেকোনো কাজের ক্ষেত্রেই যেটা খুব দরকার তা হল গভীর মনোনিবেশ। আলস জীবনযাপন বা অতিরিক্ত ঘুমের মত খারাপ অভ্যাসগুলোকে বাদ দিতে হবে। মনোনিবেশ করতে হবে নিয়মিত ব্যায়াম আর ধ্যানের প্রতি। আর এইভাবেই একটু একটু করে মুদ্রাদোষ পরিহারের ক্ষমতা তৈরি করুন।

৫. নিজের কাছের মানুষ যারা আছেন তাদের জানিয়ে রাখুন, যাতে তাঁরা এই ধরণের কাজের সময় হয় আপনাকে থামিয়ে দেন নতুবা মনে করিয়ে দেন।

৬. মুদ্রাদোষ থেকে মুক্তি পেতে নিজের সাথে নিজে একটি চমৎকার ব্যায়াম করা যেতে পারে। আর তা হলো যিনি পা নাড়েন বা হাত দিয়ে কান, মাথা ও নাক চুলকাতে থাকেন, তিনি দিনের যেকোন একটা সময় একটানা হাত বা পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকুন। মনোযোগ নিয়ে দেখুন আর হঠাৎ বেখেয়াল হয়ে পা নাড়াচ্ছেন এটা বোঝা মাত্রই তা বন্ধ করে ফেলুন। দেখবেন কিছু দিনের মধ্যেই আপনার এই ধরণের দোষ দূর হয়ে যাবে।

৭. যদি দেখেন এত কিছুর পরও এই সমস্যাদূর না হয়ে আরও মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেছে তাহলে অবশ্যই একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সর্বপরি সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ষাট বছর বয়সে নায়াগ্রা জলপ্রপাত পাড়ি দেয়া অ্যানি এডসন টেলর

কেমন ছিল ময়ূর সিংহাসন?

মহামারী প্লেগ, পলিও আর ভয়ানক পীত জ্বরের কথা